বর্তমান বাংলাদেশ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। ফলশ্রুতিতে ১৭২৬ সালে, যখন রাজা ১ম জর্জ কলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজ প্রদেশের বিচার প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে একটি সনদ জারি করেন, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আদালতসমূহ রাজার নিকট হতে তাদের কর্তৃত্ব লাভ করতে শুরু করে, আমাদের আইনি ব্যবস্থার সূচনা ঘটে । উল্লেখ্য যে, মুঘল সাম্রাজ্যের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বন্দোবস্তের মাধ্যমে মুঘল বাদশার অনুমতি নিয়ে মাদ্রাজ, বোম্বে এবং কলকাতা নামক তিনটি প্রাদেশিক শহর তৈরী করে এবং এই প্রাদেশিক শহরগুলোর প্রশাসন পরিচালনার জন্য ব্রিটিশ আইনি ব্যবস্থা চালু করে এবং এর মাধ্যমেই ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থা ভারতীয় উপমহাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ১৭২৬ সালের সনদের মাধ্যমেই তৎকালীন ভারত থেকে ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলে আপিল দায়েরের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছিল এবং তারপরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৭৭৩ প্রবর্তন করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন করার এবং একটি সনদ বা লেটারস্ পেটেন্টের মাধ্যমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে সুপ্রীম কোর্ট অফ জুডিকেচার প্রতিষ্ঠার বিধান করা হয়েছিল। বাংলায় ফোর্ট উইলিয়ামে সুপ্রীম কোর্ট অফ জুডিকেচার ২৬শে মার্চ, ১৭৭৪ সালে জারিকৃত লেটারস্ পেটেন্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, রেকর্ড আদালত হিসেবে এই আদালতের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চলে ব্রিটিশ রাজের প্রজাদের বিরুদ্ধে যে কোনও অপরাধ, মামলা বা পদক্ষেপের বিষয়ে উদ্ভূত সমস্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল। ১৮৩৩ সালে প্রণীত একটি আইনের মাধ্যমে প্রিভি কাউন্সিলকে অভিশংসন প্রতিরোধ্য কর্তৃত্বসম্পন্ন একটি রাজকীয় আদালতে পরিণত করা হয়, যা ভারতীয় উপমহাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতীয় হাইকোর্ট আইন, ১৮৬১ প্রণয়নের মাধ্যমে তৎকালীন ভারতের বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে ফোর্ট উইলিয়াম (কলকাতা), মাদ্রাজ এবং বোম্বেতে সুপ্রীম কোর্টগুলোকে বাতিল করে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং হাইকোর্টগুলোকে মূল এবং আপিলের এখতিয়ারের পাশাপাশি দেওয়ানি, ফৌজদারি, নৌ সংক্রান্ত, উইল এবং বিবাহ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ারও প্রদান করা হয়েছিল। তৎকালীন ভারত বিভাগের ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হতে জনগণের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের সাথে সাথে ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ এর অধীনে হাইকোর্ট অফ বেঙ্গল (অর্ডার), ১৯৪৭ জারি করা হয়েছিল এবং ঢাকায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি পৃথক হাইকোর্ট হিসেবে হাইকোর্ট অফ জুডিকেচার ফর ইষ্ট বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং উক্ত হাইকোর্টটি সাধারণভাবে ঢাকা হাইকোর্ট নামে পরিচিত ছিল এবং এর ওপর সমস্ত আপিল, দেওয়ানি এবং মূল এখতিয়ার ন্যস্ত ছিল। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সংবিধান কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সমন্বয়ে গঠিত দেশটির সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে সুপ্রীম কোর্ট অফ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যার পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থিত হাইকোর্টসমূহের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল শোনার এখতিয়ার ছিল। ঢাকা হাইকোর্টের সংবিধান পরিপন্থী কোনো আইনকে বাতিল ঘোষণার পাশাপাশি রিট অফ হেবিয়াস কর্পাস, ম্যানডামাস, প্রহিবিশন, কো-ওয়ারেন্টো এবং সারসিওরারাই জারি করার এখতিয়ার ছিল।
|